২৪খবরবিডি: 'মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশে যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল, আল কোরআন।'
আল্লাহর পিয়ারা হাবিব, আখেরি নবী, বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র, হজরত আলী (রা.)-এর আদরের দুলাল, জান্নাতি রমণীদের সরদার, নবী নন্দিনী হজরত ফাতিমা (রা.)-এর কলিজার টুকরা, আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য, জান্নাতের সরদার, বিশ্ব মুসলিমের নয়নমণি, হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আশুরা দিবসে উত্তপ্ত মরুভূমি কারবালা প্রান্তরে, ফুরাত নদীর তীরে, ক্ষমতালোভী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মম, নৃশংসভাবে শাহাদাতবরণ করেন। এ নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। কারবালা ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর। যেখানে ৬২ হিজরির মহরম মাসের ১০ তারিখ শুক্রবার, হজরত হুসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করেছিলেন। ইতিহাসে এটি একটি মর্মান্তিক বিয়োগান্তক ঘটনা। ইসলামের নামে ক্ষমতালোভী এজিদ বাহিনীর দুঃশাসনে যখন কুফার শান্তিপ্রিয় সরলমনা নিরীহ মুসলিমরা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল এবং ইসলামকে চিরতরে নির্মূল করে দেওয়ার গোপন পরিকল্পনা চলছিল তখন সেই অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে, নিরীহ কুফাবাসী মুসলিমদের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের সান্ত¡না দেওয়ার জন্য কুফাবাসীর অনুরোধে নবীবংশের ধারক-বাহক হজরত হুসাইন (রা.) মদিনা মুনাওয়ারা থেকে রওনা হন। কিন্তু আতঙ্কিত ক্ষমতালোভী এজিদ, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় নবী দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-কে কারবালার ময়দানে প্রতিহত করে এবং তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নবী দৌহিত্রকে হত্যা করতেও তার হাত প্রকম্পিত হয়নি। কারবালার এ হৃদয় বিদারক ঘটনা, মহিমাময় মহররম মাসের ঐতিহাসিক মহান আশুরার দিনে সংঘটিত হওয়ায় এতে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে।
'এতে শাহাদাতের মাহাত্ম্য যেমন বহু গুণে বেড়েছে, তেমনি আশুরা পেয়েছে ইতিহাসের নতুন পরিচিতি। হুসাইনি কাফেলা যখন কারবালায় অবস্থান করছে, তখন তাদের পানির একমাত্র উৎস এই ফুরাত নদী, যা ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ বাহিনী ঘিরে রাখে, অবরুদ্ধ করে রাখে নিরস্ত্র অসহায় আহলে বাইতকে, এ নদী থেকে পানি সংগ্রহ করতে গেলে ফুলের মতো নিষ্পাপ দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্র আলী আসগার এক ফোঁটা পানির জন্য সীমার বাহিনীর তীরের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। সেদিন ফোরাতকূলে পানি পানি বলে অবর্ণনীয় মাতম উঠেছিল। সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত কারবালার প্রান্তরে প্রতারিত নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হোসাইনি কাফেলা বিশ্ব মুসলিম ইতিহাসে চির স্মরণীয় ও বরণীয় এবং কুচক্রী, ক্ষমতালোভী, স্বৈরাচারী এজিদ বাহিনী চির কলঙ্কিত ও ঘৃণিত। প্রতিটি মহররম ও আশুরা আমাদের সত্য ও ন্যায়ের ওপর দৃঢ়পদ থাকার মাহাত্ম্য স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসলামী জীবনযাপনে সঠিক শিক্ষা ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করে, ভয়কে জয় করে নিজের জীবন উৎসর্গ করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণে কারবালা উদ্বুদ্ধ করে। ঠিক তেমনিভাবে বাঙালি মুসলিম জাতির ভাগ্যাকাশে ১৫ আগস্ট যেন আরেকটি নির্মম কারবালার ইতিহাস রচিত হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল কিছু সৈনিকের হাতে, বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, আল্লাহর নাম নিয়ে ও 'ইনশা আল্লাহ' বলে বজ্রকণ্ঠে বক্তৃতা প্রদান করে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। ১৫ আগস্টের সেই ভয়াল কালরাতে ঘাতকরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় নির্মমভাবে হত্যা করে তাকে সপরিবারে নিঃশেষ করার ভয়াবহ ও অপরিণামদর্শী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর প্রিয়তমা স্ত্রী, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ শিশুপুত্র শেখ রাসেল, সদ্যবিবাহিত পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরসহ অনেককেই হত্যা করা হয়। বাংলা ও বাঙালির এ রাখাল নেতার হত্যাকান্ড বিশ্বের বুকে নিন্দিত ও ঘৃণিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের উদাহরণ হয়ে আছে। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। নরপিশাচরূপী খুনিরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং বঙ্গবন্ধুর শেষ রক্তবিন্দু ।
-প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, এ শোকের মাসেই আরও একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার জন্ম দেয়। কিন্তু 'রাখে আল্লাহ মারে কে' মহান রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় এ যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
'মহররম শোকের মাস'
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন তিনি ঘোষণা করলেন, আমার দেশের রেডিও-টেলিভিশনে নিয়মিত আজান হবে এবং কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানসূচি শুরু হবে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীর ময়দান প্রদান করেন। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে উভয় শোকের মাসের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, নবজাগরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়ের সামনে মাথা নত না করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করব ইনশা আল্লাহ। আল্লাহুম্মা আমীন।