/ নিরাপত্তা বেষ্টনির ব্যবস্থা না করেই সড়কের পাশে চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ /
২৪খবরবিডি: 'ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্প কাজের আশপাশে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচল করছে বিভিন্ন পরিবহন। ভারী যন্ত্রপাতি উঠানামা, ঝুঁকিপূর্ণ ও উন্মুক্ত অবস্থায় গার্ডার ও অন্যান্য নির্মাণ উপকরণ সংরক্ষণ করায় আবারও যেকোনও সময় দুর্ঘটনার শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ।'
সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় সম্প্রতি অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনায় ছয় জন নিহত ও কমপক্ষে তিন জন আহত হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সড়কের ওপর রোড ডিভাইডারের কাটা অংশ ফেলে রাখা হয়েছে। গার্ডার, স্লাব সড়কের পাশে উন্মুক্তভাবে রাখা হয়েছে। ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ নানা নির্মাণসামগ্রীও উন্মুক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা যায়নি। ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত চলছে বিআরটি প্রকল্পের এ কাজ।
উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে নিহত ৫
'ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মিল গেট, টঙ্গী কলেজ গেট, হোসেন মার্কেট, চেরাগআলী, বাসন সড়ক, কুনিয়া তারগাছ, বোর্ড বাজার, ভোগরা বাইপাস পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব জায়গায় চলছে বিআরটির স্টেশন, ফ্লাইওভার, গার্ডার পিলার নির্মাণের কাজ। বেশিরভাগ স্থানেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করা হয়নি। বাঁশ, টিন ও কাঠের বেড়া দিয়ে কোনও কোনও জায়গায় নামে মাত্র নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের দেওয়া তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরের অভ্যন্তরে এবং সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহার করে কমপক্ষে ৫৫ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। অর্ধেকের বেশি চলাচল করছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে। ময়মনসিংহের আলম এশিয়া পরিবহনের চালক আব্দুল বাতেন বলেন, সড়ক উন্নয়নকাজে কোনও জায়গায় চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ, আবার কোনও জায়গায় গার্ডার উঠানোর কাজ চলছে। নির্মাণাধীন এসব কিছুর নিচ দিয়ে প্রতিনিয়ত যানবাহন, মানুষ চলাচল করছে। এসব কাজে আগে কখনও নিরাপত্তা প্রাচীর দেওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়নি। আগের মতোই চলছে নির্মাণকাজ। কোথাও রোড ডিভাইডার শুরু হয়ে এমন জায়গায় শেষ করা হয়েছে যেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তায়ই এমনটি রয়েছে।
![](https://mail.google.com/mail/u/0?ui=2&ik=f18ef75737&attid=0.3&permmsgid=msg-a:r3449825018217380562&th=182dd23a39793396&view=att&disp=safe&realattid=f_l7bacys52)
বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ধসে আহত ৩
'গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের ইলেক্ট্রিক ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্কেটের তিন তলা থেকে প্রতিদিন কাজের দৃশ্য দেখা যায়। সড়কে চলাচলকারী কোনও মানুষ কাজের এ দৃশ্য দেখলে নিচ দিয়ে যেতে চাইবে না। সব লোহা লক্করের কাজ। কোনও একটি লোহার দণ্ড নিচে পড়ে গেলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা। এসবের নিচে কোনও পাটাতন বা পড়ে যাওয়া বস্তু ঠেকানোর প্রতিবন্ধক রাখা হয়নি। ঢাকা থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় চলাচলকারী প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের চালক আরজু মিয়া বলেন, কোথাও কোথাও যানবাহন চলাচলে ডিভাইডারের কাটা অংশ ফেলে চলাচলের গতি নির্দেশ করা হয়েছে। আবার কোথাও কোনও নির্দেশক নেই। যানবাহন যে যার মতো পথে চলছে। প্রথম দিকে সড়কের টঙ্গীসহ কোনও কোনও অংশে টিন দিয়ে প্রাচীর করে গার্ডারের পিলার নির্মাণের কাজ হয়েছিল। নিরাপত্তার এ পদ্ধতিটি বেশিদিন চোখে পড়েনি। স্থানীয়রা বলছেন, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এখানে বিশাল জায়গা নিয়ে উড়ালসেতু নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত হাজার হাজার পথচারী চৌরাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। চৌরাস্তার চারপাশে ইট, বালু সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী ছড়িয়ে রয়েছে। ভারী যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী মাথার ওপর ঝুলে থাকলেও নিচে নেই কোনও বেষ্টনী। ঝুঁকি মাথায় নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে।
![](https://mail.google.com/mail/u/0?ui=2&ik=f18ef75737&attid=0.1&permmsgid=msg-a:r3449825018217380562&th=182dd23a39793396&view=att&disp=safe&realattid=f_l7bacyrm1)
-মহানগরের ছায়াবীথি এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম। শ্রীপুরের একটি পোশাক কারখানায় টেকনিক্যাল ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। তিনি বলেন, গত প্রায় তিন বছর ধরে সকালে চান্দনা চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি অফিসের গাড়ির জন্য। তবে মনে ভয় ও শঙ্কা কাজ করে। বিআরটি প্রকল্পের কাজের চরম অব্যবস্থাপনায় হতাশ যাত্রী ও চালকেরা ।
ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই বিআরটি প্রকল্পে, 'ঝুঁকি নিয়েই চলাচল'
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটি প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ জানান, এ প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। এ বছরেই বাকি কাজ শেষ হবে না। সময় বাড়ানোর জন্য সংশোধন করতে হবে। এজন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তিনি নিরাপত্তা বেষ্টনী ও দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
![](https://mail.google.com/mail/u/0?ui=2&ik=f18ef75737&attid=0.4&permmsgid=msg-a:r3449825018217380562&th=182dd23a39793396&view=att&disp=safe&realattid=f_l7bacyog0)
চান্দনা চৌরাস্তা থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী পর্যন্ত সড়কের প্রধান দুটি অংশে ডিভাইডার রয়েছে। কোথাও পার্শ্ব রাস্তায় ডিভাইডার রয়েছে। কিন্তু পার্শ্ব রাস্তাগুলোতে যানবাহন সহজেই লেন পরিবর্তন করতে পারছে। এক ফুট পরিমাণ ড্রেন অতিক্রম করে যাচ্ছেতাইভাবে যানবাহনগুলো লেন পরিবর্তন করে। এরমধ্যেই সড়কের সার্ডি রোড, গাজীপুর জেলা কারাগার, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চলছে। যা থেকে যেকোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান বলেন, প্রকল্প কর্মকর্তারা বিভিন্ন বৈঠকে ঝুঁকি প্রতিরোধের আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেননি। তারা বিকল্প রাস্তার কথা বলেও তা করেননি। গাজীপুর মহানগরের ওপর দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন এবং লক্ষ কোটি মানুষ চলাচল করছে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্য দিয়ে। গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকা, ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে পানি না ছিটানো, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ মোকাবিলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না রাখার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকদের বেশ কয়েকবার দণ্ড দেওয়া হয়েছে। 'প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট উড়াল সড়কের গার্ডারের চাপায় রাজধানীর উত্তরায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে একটি প্রাইভেটকারের পাঁচ আরোহী নিহত ও দু'জন আহত হন। ওই দিন বিকালে ব্যস্ত সড়কে গার্ডার ওঠানোর কাজ করার সময় একটি ক্রেন কাত হয়ে গেলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত ১৫ জুলাই উড়াল সড়কের লঞ্চিং গার্ডার পড়ে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত ও দুজন আহত হন।'