সর্বশেষ

ডলারের অবৈধ বাজারে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা

প্রকাশ :


২৪খবর বিডি: ' খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ডলারের দর ব্যাংকের তুলনায় খোলাবাজারে দ্রুত বেড়েছে। হুন্ডি ও অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার কারণে ডলারের অবৈধ বাজারে চাহিদা বেড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দর আরও বাড়বে এমন আশায় অনেকে ডলার কিনে রাখছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংও বেড়েছে।'

* আগের দিন হঠাৎ এক লাফে খোলাবাজারে ১০২ টাকায় উঠে যাওয়া ডলার গতকাল কিছুটা কমেছে। গতকাল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ব্যাংকে আগের দিনের মতোই আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের দর অপরিবর্তিত ছিল। এদিকে শেয়ারবাজারের মতো অনেকে এখন মুনাফার আশায় ডলারে বিনিয়োগ করছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে এভাবে বিনিয়োগ করা অবৈধ।

 
* চলতি অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। প্রথম ১০ মাসে ৭ লাখের বেশি লোক বিদেশে কাজের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন। সরকার রেমিট্যান্সের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে। এরপরও আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানো কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার জন্য হুন্ডি বেড়ে যাওয়াকে অন্যতম কারণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রণোদনা থাকলেও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর খরচ বিবেচনায় নিলে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অনেক বেশি দর পাচ্ছেন প্রবাসীরা।

' চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম ২৪খবর বিডিকে বলেন, পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ম্ফীতি হয়েছে। বাংলাদেশেও ডলারের দর বেড়েছে। তবে আন্তঃব্যাংক দরের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দরের এত পার্থক্যের অন্যতম কারণ হুন্ডি বেড়ে যাওয়া।'

* তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে তার প্রায় সমান আসে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে। পুঁজি পাচারকারীরা হুন্ডি কারবারিদের কাছ থেকে ডলার কেনে। সাধারণত বিভিন্ন উপায়ে নেওয়া ঋণের অর্থ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ এভাবে পাচার হয়। এ ছাড়া আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে দুর্নীতি বন্ধ ও ঋণের ওপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তদারকি বাড়াতে হবে।

* সংশ্নিষ্টরা জানান, করোনার কারণে দুই বছরের স্থবিরতার পর বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই পণ্যমূল্য বাড়তির দিকে ছিল। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বেশিরভাগ পণ্যের দর আরও বাড়ছে। এতে করে একই পরিমাণের পণ্য আমদানিতে এখন আগের চেয়ে বেশি ডলার খরচ হচ্ছে। যে কারণে আমদানির সঙ্গে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১৪ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এই পার্থক্য মেটানোর ক্ষেত্রে বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের চাহিদা পূরণে চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে ৫৪০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গত আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।

 

/   ডলারের অবৈধ বাজারে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা    /


* সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্‌ উদ্দীন আহমেদ ২৪খবর বিডিকে বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এমনিতেই ডলারের দর বাড়ছে। পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে পরিশোধ বেড়ে যাওয়া এভাবে দর বাড়ার পেছনে একটি কারণ হতে পারে। এ ছাড়া একটা শ্রেণি মনে করছে, ডলারের দর হয়তো আরও বাড়বে। যে কারণে শেয়ারবাজারের মতো তারা ডলারে বিনিয়োগ করছে।

' তিনি মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে তদারকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে আমদানি কমানো, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো বহুজাতিক সংস্থা থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাড়াতে হবে।'

* ব্যাংকাররা জানান, সাধারণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করে তার সঙ্গে আমদানির জন্য ৫ থেকে ১০ পয়সা পার্থক্য থাকে। আর ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিজেদের ওয়েবসাইটে যে দর ঘোষণা করে, সে দরেই বিক্রি করে। তবে এখন কোনো ব্যাংক ঘোষিত দরে ডলার বিক্রি করছে না। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে আরও ৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। গত কয়েকদিনের মতো গতকালও আমদানির জন্য অনেক ক্ষেত্রে ৯৭ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনতে হয়েছে। আর রপ্তানি ও রেমিটারদের থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছে অনেক ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউস। মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে ডলার চলে যাওয়া ঠেকাতে বাড়তি দর দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

* মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ২৪খবর বিডিকে বলেন, করোনার স্থবিরতার পর বিশ্বব্যাপী ভোগ এমনিতেই বেড়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধের কারণে পণ্যমূল্য আরও বাড়ছে। এতে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ঘাটতি বেড়ে গেছে। সাধারণত আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে ডলারের দরে ২ থেকে ৩ টাকা পার্থক্য থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে পার্থক্য অনেক বেশি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকও দর বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ যাতে দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য বেশি দামে ডলার কিনছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ২৪খবর বিডিকে বলেন, চলতি অর্থবছর আমাদের ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি এবং ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো রপ্তানি হতে পারে। দুইয়ের মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের মতো যে পার্থক্য থাকে তার মধ্যে ২১ বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ হবে। এর বাইরে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার হয়তো এফডিআই থেকে আসবে। বাকি পার্থক্য পূরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এরপরও কোনো কারণে যদি অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত