সর্বশেষ

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পরিসেবার বেহাল দশা পাসপোর্ট সেবায়

/ ভরসা যেখানে দালাল চক্রই /

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পরিসেবার বেহাল দশা। প্রতিদিন আড়াই হাজার ব্যক্তি আবেদন নিয়ে আসছেন। তাদের সঙ্গে থাকছে প্রায় দুই হাজার আত্মীয়-স্বজন। এ ছাড়া পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতেও একই পরিমাণ লোক আসছেন। আবার ভুল তথ্য সংশোধন চেয়েও একাধিক লোক আসছেন। প্রতিনিয়ত এ বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিড় করছেন। পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে যেন তিলধারণের ঠাঁই নেই। বাইরেও প্রচুর লোকের আনাগোনা। এত মানুষের সেবা দেওয়ার মতো জনবল ও অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে এত ভিড় দেখে অনেকে আবার দালালচক্রের ওপর ভরসা করছেন। অনলাইনভিত্তিক পাসপোর্ট পরিসেবা হওয়ায় দালালদের শরণাপন্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ।'

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের জন্য গ্রাহকরা অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার পর দীর্ঘদিন পর সিরিয়াল পাচ্ছেন। জমা দিতে গিয়ে ভিড় ঠেলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে আবেদন জমা দিতে হচ্ছে। পাসপোর্ট আনতে গিয়েও দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের ভোগান্তি নিত্যদিনের। এ ছাড়া ছোটখাটো ভুলের কারণে ভোগান্তি তো রয়েছেই। জেলা পাসপোর্ট অফিসে তেমন ভিড় না থাকলেও আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে লোকজনের ভিড় লক্ষ্যণীয়। এত লোকের ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তি ক্রমেই বেড়ে চলছে। অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদনের দেড় থেকে দুই মাস পর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সিরিয়াল পাওয়া যায়।
 

'জনবল ও অবকাঠামো বাড়ানো হলে পাসপোর্ট অফিসের এ ভোগান্তি কমবে বলে জানিয়েছেন গ্রাহক ও পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৬৪ জেলার লোকজন ঢাকার পাসপোর্ট অফিসগুলোতে ভিড় করায় পাসপোর্ট সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্রাহকরাও পাসপোর্ট পেতে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। আবেদন করা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত অনেক সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। জরুরি এ সেবা পেতে ভোগান্তির শেষ থাকে না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ঢাকায় আরও দুটি পাসপোর্ট অফিসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে একদিকে ভোগান্তি কমবে অন্যদিকে সহজে মিলবে পাসপোর্ট সেবা।'

-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন দুটি অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং সেন্টার (এপিসি) বা আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালুর চেষ্টা চলছে। এ এপিসিকে ঢাকা পূর্বাঞ্চল যথাক্রমে মতিঝিল, পল্টন, রামপুরা, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, চকবাজার, দোহার ও বংশাল এবং ঢাকা পশ্চিমাঞ্চল যেমন- আদাবর, সাভার, ধামরাই, শাহআলী, তুরাগ, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ এলাকাকে ধরা হয়েছে। এতে ঢাকায় বসবাসকারী বিভিন্ন জেলার নাগরিকরা এ অফিসগুলো থেকে আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারবেন। পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ অধিদফতরের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন চলছে এপিসি সেন্টার চালুর প্রক্রিয়া।

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পরিসেবার বেহাল দশা পাসপোর্ট সেবায়

-জানা গেছে, প্রতিদিন যে পরিমাণ পাসপোর্ট  জমা নেওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি আবেদন জমা পড়ছে। ফলে অনলাইনে আবেদন করার পর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সিরিয়াল পেতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এ ছাড়া আবেদনপত্র নির্ভুল না হলে সঠিক সময়ে পাসপোর্ট প্রদান করা যায় না। ভুল সংশোধনের সবচেয়ে বেশি আবেদন আসে নাম, বয়স ও ঠিকানা পরিবর্তনের। নতুন আবেদনকারীদের ভুল-ত্রুটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা গেলেও সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় পুরাতন পাসপোর্টধারীদের ভুল তথ্য সংশোধনে। ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লেগে যায়।

-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে ব্যাংক, বিআরসি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের কাজ রয়েছে। কোনো কারণে কোনো একটি সংস্থার সার্ভারে ঝামেলা হলে পাসপোর্ট অফিসের চলমান কাজে বিঘ্ন ঘটে। সেবা পেতে দেরি হলে শুধু পাসপোর্ট অফিসের দোষ হচ্ছে। অনেক সময় পুলিশের প্রতিবেদন পেতে দেরি হয়। প্রতিটি আবেদনের জন্য বায়োমেট্রিক করতে হয়। একেকটি বায়োমেট্রিকের জন্য ন্যূনতম ৫ মিনিট সময় লাগে। এতে আবেদনকারীকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার অনেক সময় আবেদনকারী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনেন না। এ কারণে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। বাইরে এসে আবেদনকারীরা ভোগান্তির কথা বলেন। কিন্তু তারা নিজেদের ভুলের কথা বলেন না।

'ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিদিন ২ হাজার ৫৬০টি পাসপোর্ট জমা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় একই পরিমাণ পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। একেকটি পাসপোর্ট জমা ও ডেলিভারি দিতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। যার কারণে পাসপোর্ট জমা ও ডেলিভারিতে ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ আবেদন জমা পড়ছে সে অনুযায়ী সেবা দিতে চাইলে শুধু ঢাকাতেই আরও অন্তত ১০টি অফিস দরকার। তবে আমাদের সাধ্যমতো গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'
 

-প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডিআইপি এবং জার্মানি ভেরিডোস জিএমবিএইচ সংস্থা ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের (ই-পাসপোর্ট) জন্য একটি চুক্তিস্বাক্ষর করে। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পর্যায়ক্রমে ৭০টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিস এবং ১২টি বিদেশি মিশনে চালু করা হয় ই-পাসপোর্ট সেবা। তবে যেসব বিদেশি মিশনে ই-পাসপোর্ট চালু হয়নি সেখানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দেশে খুবই সীমিত পরিসরে এমআরপি পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হচ্ছে। জার্মান সংস্থা ভেরিডোস জিএমবিএইচ দেশে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেটে কাজ করছে। ১০ বছরে মোট ৩০ মিলিয়ন পাসপোর্ট বিতরণের কথা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই সর্বপ্রথম ই-পাসপোর্ট চালু করে।

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত